আবু তাহের মুহম্মদ গােলাম মাওলা চৌধুরী

আবু তাহের মুহম্মদ গােলাম মাওলা চৌধুরী, পরিচ্ছন্ন এক রাজনীতিবিদ। ছাগলনাইয়া পশুরাম-ফুলগাজী, ফেনী-১নির্বাচনী এলাকা নিয়ে যার রাজনৈতিক পরিমন্ডল । ত্রিপুরার প্রথম মুসলিম স্বাধীন নবাব শমসের গাজীর সপ্তম বংশধর এ টি এম গােলাম মাওলা চৌধুরী, শিক্ষা জীবন শুরু করেন শুভপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। এরপর জগন্নাথ সােনাপুর স্কুল, দক্ষিণ বল্লভপুর উচ্চ বিদ্যালয়, নেী সরকারী কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ এবং নিউ মডেল। ডিগ্রী কলেজ থেকে উচ্চতর শিক্ষাজীবন শেষ করেন। স্কুল জীবন থেকেই ছাত্র রাজনীতির প্রতি দূর্বলতা ছিলাে তাঁর। ৭১ এ বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ১ নম্বর সেক্টরের মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন, সবেমাত্র মেট্রিক পাশ বাউনডেলে কিশাের মাওলা চৌধুরী। আর স্বাধীনতা পরবর্তী সরকারের দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে ১৯৭৩ সালে জাসদের মাধ্যমে সক্রিয় রাজনীতিতে আসেন এই মুক্তিযােদ্ধা। ৭৫ এর প্রচলিত রাজনীতির বাইরে গিয়ে গণবাহিনী গঠনকে কেন্দ্র করে মত-বিরােধ দেখা দিলে সমাজতান্ত্রিক। রাজনৈতিক ধারা থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি। জাসদের রাজনীতিতে সক্রিয় হবার-পর থেকে তাঁর উপর চলে জেল-জুলুমসহ নানা ধরণের নির্যাতন। আর জাসদ ছেড়ে দেয়ার পর বেড়ে যায়, সেই মাত্রা তবে রাজনীতি করতে এসে শত নির্যাতনেও পিছু ফিরে তাকাননি মাওলা চৌধুরী। ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে জাতীয় রাজনীতিতে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন সাফল্যের সঙ্গে। ১৯৭৪ সালে জাসদ ছাত্রলীগের মােহাম্মদপুর থানা শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। জাসদের রাজনীতিতে জড়িয়ে প্রথম দিকে আত্ম গােপনে থেকেই চালিয়ে ছেন রাজনৈতিক কর্মকান্ড। তেমনি অবস্থায় ৭৪’এর মে মাসে আগ্নেয়াস্ত্রের মিথ্যা অভিযােগে ফেনী থেকে আটক করা হয় নবাব শমসের গাজী এই বংশধরকে। এ সময়। ২মাস ২২দিন কারাভােগ করেন তিনি। সে সময় পুলিশ রিমান্ডে তাঁর উপর চালানাে হয় অমানুষিক নির্যাতন। পায়ের তালু ও হাঁটুর সেই আঘাত আজও যন্ত্রণা দেয় তাঁকে। দ্বিতীয় বার গ্রেফতারের শিকার ৮৫/৮৬ এর দিকে। তঙ্কালীন সরকার বিরােধী আন্দোলনে বেশ ক’বার আটক করা হয় তাঁকে। সবশেষ ১৯৯৮ সালের ৩০ মার্চ পার্বত্য চুক্তি বাতিলের দাবিতে অনশন থেকে আবার ১৯৯৯ সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচী পালনের সময় : আটকের শিকার হয়ে আবার কারাগারে সংগ্রামী এই রাজনীতিবিদ। ১৯৮০ সালে বিএনপিতে যােগ দিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তরুন রাজনীতিক মাওলা চৌধুরী। পরে ১৯৮৪ সালে জাতীয়তাবাদি রাজনীতি নিয়ে মত পার্থক্য দেখা দিলে, বিএনপি গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নেন তিনি। শুরুতে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নিলেও, ৮৬ সালে জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে পিএনপির মহাসচিব নির্বাচিত হন এই রাজনীতিক। দীর্ঘ ১৬ বৎসর পিএনপির রাজনীতিতে চারটি কাউন্সিলের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ এই পদে সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পাশাপাশি দেশের সংকটকালে জাতীয় রাজনীতিতে রয়েছে তাঁর বিশেষ ভূমিকা। রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন সক্রিয়। ২০০২ সালে তিন দলের যৌথ কাউন্সিলের মাধ্যমে জাগপা-পিএনপি বিলুপ্ত করে যােগ দেন জাতীয় পার্টিতে যােগদানের পর থেকে জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে গেলাে ১৬বৎসর দায়িত্ব পালন করেছেন সততা, নিষ্ঠা ও যােগ্যতার সঙ্গে। আবু তাহের মুহম্মদ গােলাম মাওলা চৌধুরীর রাজনৈতিক দক্ষতা, যােগ্যতা ও অভিজ্ঞতা প্রশ্নাতীত। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য ফেনী নদীর পানি রক্ষার দাবীতে লংমার্চ কর্মসূচীর উদ্যোগ। টিপাইমুখ লংমার্চ কর্মসূচী ঘােষনার আগেই ফেনীমুখি লংমাচ করার প্রয়ােজনীয়তা সাংবাদিক, বিশেষজ্ঞ ও বন্ধু মহলে তুলে ধরেন তিনি। তাই দেশের আভ্যন্তরীন জলপ্রবাহ ফেনী নদী নিয়ে ভারতে আগ্রাসী নীতির প্রতিবাদ জানাতে প্রথম রাজনৈতিক আন্দোলনের ডাক দেন তিনি। তাঁর চিন্তা চেতনা নিঃসৃত ফেনী নদীর পানি রক্ষার দাবিতে লং মার্চ কর্মসূচী পালন করা হয়। শুরুতে চলে মাঠের পর্যবেক্ষণ। ব্যক্তিগত উদ্যোগে ঢাকা থেকে সাংবাদিক ও বিশেষজ্ঞ নিয়ে ফেনী নদীর প্রকৃত অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন তিনি। পরে এর উপর তৈরী করা হয় গবেষণাপত্র । বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয় ধারাবাহিক প্রতিবেদন। চুড়ান্ত পর্যায়ে গবেষণারপত্র। ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন নিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এর সঙ্গে মুল্যায়ন বৈঠক করেন এ টি এম গােলাম মাওলা চৌধুরী। এর পর পরই ঘােষণা আসে ফেনী নদীর পানি রক্ষায় লংমার্চ কর্মসূচী। অনেক মতবিরােধ থাকলেও যা সাফল্যের সঙ্গে পালন করা হয় ৫ মার্চ ২০১২। এক্ষেত্রে তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় মেলে ফেনীর জনসভায় । যা সমাদৃত হয় সকল মহলে।
২০১৭ সালে জাতীয় পার্টির অসুস্থ, ও আপসকামী রাজনীতির কারণে দলের ভাইস চেয়ারম্যান এর পদ থেকে পদত্যাগপত্র দলের তকালীন চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এর হাতে পদত্যাগপত্র দিয়ে দল থেকে বের হয়ে আসেন। তারপর একঝাক প্রবীন এবং নবীনদের সমন্বয়ে গণমানুষের অধিকার সুস্থধারা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এবং পরিচ্ছন্ন রাজনীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণদল গঠন করেন এবং দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসাবে নির্বাচিত হন। তারপর ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠে। তখন ডঃ কামাল হােসেন এর সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বিএনপি, গনফোরাম আ.স.ম আবদুর রব এর নেতৃত্বাধীন জাসদ, কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন জনতা লীগ, মাহমুদুর রহমান মান্না নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য, গােলাম মাওলা
চৌধুরী নেতৃত্বাধীন গণদল, ডাঃ নুরুল আমিন বেপারীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা বাংলাদেশ সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতা হিসাবে নেতৃত্ব দেন। আজও তিনি স্বাধীনতার চেতনাকে সমুন্নত রেখে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, ভােটের অধিকার, ন্যায় বিচার, সুশাসন, উন্নয়ন, স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াই এ নিজেকে অব্যাহত রেখেছেন। ১৯৭৫ সালে চামড়া শিল্পের কল্যাণে গঠিত হাজারীবাগ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা। সাধারণ সম্পাদক, ১৯৮৫ সাল ১৯টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত ফারাক্কা সংগ্রাম। পরিষদ” এর মহাসচিব, ১৯৮৬ সালে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের প্রেসিডিয়াম সদস্য, ১৯৯০ সালে। পাঁচ দলীয় মাের্চার প্রেসিডিয়াম সদস্য, ১৯৯৩ তে সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ” এর মজলিসে শুরার সদস্য ১৯৯৮ সালে ৭দলীয় জোট গঠন ও জোটের লিয়াজো কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জাতীয় রাজনীতির বাইরে, বাংলাদেশ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের উপদেষ্টা, এশিয়া মুসলিম যুব কল্যাণ পরিষদের উপদেষ্টা, চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সমিতির সদস্য, ঢাকাস্থ ফেনী জেলা সমিতি ৯৩ এর সহ-সভাপতি, ঢাকাস্থ ছাগলনাইয় ছাত্র কল্যাণ সমিতির উপদেষ্টা এবং শমসের গাজী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন এ টি এম গােলাম মাওলা চৌধুরী। বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল। হিউম্যান রাইটস কমিশন (এপিলেটেড বাই ইউনাইটেড ন্যাশন) এর প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন! ফান (জাপলেটে বই উ৫৮ঠন)ৎ প্লান উপদেষ্ঠা হিসাঠে পত্বি পালন করছেন। ১৯৫৩ সালে। ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া জগন্নাথ সােনারপুর গ্রামের স্বভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন, আবু। তাহের, মুহম্মদ গােলাম মাওলা চৌধুরী। পিতা মরহুম আবু নাছের চৌধুরী। তাঁর পিতা আবু নাছের চৌধুরী ৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মাতা আনােয়ারা বেগম ছিলেন একজন গৃহিণী। ৭ ভাই ও বােনের মধ্যে মাওলা চৌধুরীর ৪ভাই সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বড় ভাই আওরঙ্গজেব চৌধুরী সাজু বি এন পি, এ টি এম গােলাম কিবরিয়া। চৌধুরী খেলাফত মজলিশের রাজনীতি এবং ছােট ভাই মােতাহার হােসেন চৌধুরী রাশেদ জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত। গােলাম মাওলা চৌধুরীর স্ত্রী শাহানারা বেগম একজন গৃহিনী। এক পুত্র সন্তানের পিতা চির সংগ্রামী পােড় খাওয়া প্রবীন এই রাজনীতিবিদ। তার পুত্র মুহম্মদ বিজয় চৌধুরী (চৌধুরী আব্দুল্লাহিল মাওলা) মাষ্টার্স পরীক্ষার্থী। ব্যক্তিগত জীবনে সে একজন উদীয়মান ক্রিকেটার। অনুর্ধ্ব ১৮ তে ফেনী জেলা ক্রিকেট টিমের হয়ে খেলছেন বিজয় চৌধুরী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *