যানজটমুক্ত রাজধানী গড়ে তুলতে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। ঢাকা মহানগরী ও তত্সংলগ্ন পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসন ও পরিবেশ উন্নয়নে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)- এর আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে ছয়টি মেট্রোরেল সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন মেয়াদের কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এসব পরিকল্পনার কিছু ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে, কিছু বাস্তবায়নাধীন এবং কিছু প্রকল্প অনুমোদন হয়ে আছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বদলে যাবে রাজধানী।
সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যানজটের কারণে ঢাকায় বছরে ক্ষতির পরিমাণ ২১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবিষয়ে গত ২৬ জুন এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন, বিভিন্ন সমীক্ষা ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়—যানবাহনের তুলনায় জনসংখ্যার আধিক্য, অপর্যাপ্ত সড়ক সুবিধা ও মিশ্র যানবাহনের কারণে ঢাকা মহানগরীতে যানজট সৃষ্টি হয়। এতে যাতায়াতে অতিরিক্ত সময় ব্যয়ের কারণে একদিকে যেমন কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে জ্বালানি খরচও বাড়ছে।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চালু হচ্ছে দেশের প্রথম উড়াল মেট্রোরেল
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মহান স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন বর্ষ ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশের প্রথম উড়াল মেট্রোরেলের সম্পূর্ণ অংশ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। গত ৩১ মে পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের সার্বিক গড় অগ্রগতি প্রায় ২৫ শতাংশ। প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৪০.৫৮ শতাংশ। ইতিমধ্যে পাঁচ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট দৃশ্যমান হয়েছে।
২২ হাজার কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের প্রথম এই উড়াল মেট্রোরেল নির্মিত হচ্ছে। এখানে ১৬টি স্টেশন থাকবে। উভয়দিকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন সম্ভব হবে। আধুনিক, সময় সাশ্রয়ী, পরিবেশ বান্ধব ও বিদ্যুত্ চালিত ম্যাস র্যাপিড ট্রান্সপোর্ট (এমআরটি) নির্মাণের লক্ষ্যে ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৬)- এর আওতায় এটা বাস্তবায়ন হচ্ছে।
অন্যান্য প্রকল্প
২০৩০ সালের মধ্যে রাজধানীকে যানজটমুক্ত করার লক্ষ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ বাস র্যাপিড ট্রান্সপোর্ট (বিআরটি) প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী জানান, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঘণ্টায় উভয়দিকে ৩০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে। উভয় পাশে ধীরগতির যানবাহনের জন্য এক স্তর নিচ দিয়ে সার্ভিস লেনসহ ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে (ইকুরিয়া-বাবুবাজার লিংক সড়কসহ) মাওয়া এবং পাচ্চর-ভাঙ্গা পর্যন্ত মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পও বাস্তবায়নাধীন। এটি হবে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় জানায়, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণেরও পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এছাড়া পিপিপি ভিত্তিতে হাতিরঝিল-ডেমরা-আমুলিয়া-শেখেরজায়গা-বনশ্রী-রামপুরা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মহাসড়কের উভয় পাশে সার্ভিস লেন নির্মাণসহ এটিকে চার লেনে উন্নীত করা হবে। ঘনবসতিপূর্ণ পুরান ঢাকার যানজট নিরসন ও উন্মুক্ত স্থানের সংস্থান করার লক্ষ্যেও নেওয়া হয়েছে আরবান রিন্যুয়াল প্রকল্প।
জানা গেছে, দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে ঢাকা শহরের জনসংখ্যা ছিল ২ লাখ ৮০ হাজার। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে এ সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। আগামীতে জ্যামিতিক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই আধুনিক রাজধানী গড়ার পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। সরকারের বিশ্বাস, গৃহীত প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়িত হলে ঢাকার যানজটের তীব্রতা কমে যাবে। এছাড়া জলাবদ্ধতা, নদী দূষণ, আবাসন সমস্যা, বিদ্যুত্-গ্যাস-পানি সংকট নিরসন করে ঢাকাকে নাগরিক সুবিধা সম্বলিত একটি পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে গড়ে তোলারও কর্মপরিকল্পনা সরকারের রয়েছে বলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
পাঠকের মতামত