দেশজুড়ে আওয়ামী লীগে থই থই করছে। সরকারী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সাধারণ ব্যাবসায়ী, কেউই বাদ নেই।
এত আওয়ামী লীগার এতদিন কোথায় ছিল? আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, এখন যে এত আওয়ামী লীগার দেখছি, এরা কি দুঃসময়ে থাকবে?
এত আওয়ামী লীগারের মধ্যে আসল নকল চিনবেন কীভাবে? কারা সুযোগ সন্ধানী, কারা দীর্ঘদিনের ত্যাগী এবং জাতির পিতার আদর্শে বিশ্বাস করে দলের দুঃসময়ে পাশে ছিল?
প্রকৃত আওয়ামী লীগার চেনার সহজ ১০টি উপায় বলেছেন শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন নেতারা। এই ১০টি বিষয়ে যদি কাউকে পরীক্ষা করা যায় তাহলেই বোঝা যাবে ঐ ব্যক্তিটি কি সুযোগ সন্ধানী আওয়ামী লীগার নাকি সত্যিকারের আওয়ামী লীগার? দলের প্রবীণ নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে-
১. প্রকৃত আওয়ামী লীগাররা সবসময় বলেন ‘জাতির পিতা’ বা ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলে স্পষ্ট ভাষায় উচ্চারণ করেন, দৃঢ়তার সাথে। নকল আওয়ামী লীগাররা বঙ্গবন্ধু বললেও তারা ‘জাতির পিতা’ বা ‘জাতির জনক’ বলতে কু’ণ্ঠাবোধ করে। বললেও দৃঢ়তার সাথে বলতে পারে না। কারন যে যেটা মনে প্রাণে ধারণ করে না, সেটা তাদের মুখেও আটকায়।
২. আসল আওয়ামী লীগ কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর অনেকগুলো ভাষণই জানেন। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ত্যাগ এবং তার বিভিন্ন পর্যায়ের ভাষণ বক্তৃতা এবং রাজনৈতিক দর্শন সম্বন্ধে জানেন। নকল আওয়ামী লীগের দৌড় শুধুমাত্র ৭ মার্চ ভাষণ পর্যন্ত। নকল আওয়ামী লীগের যে কোন নেতা শুধু ৭ মার্চ ভাষণের বাইরে বঙ্গবন্ধুর আর একটি ভাষণও উল্লেখ করতে পারে না। যদিও বঙ্গবন্ধুর অনেক ভাষণই এখন রেডিও টেলিভিশনে বারংবার প্রচারিত হচ্ছে। কিন্তু তাদের সবকিছু ৭ মার্চ ঘিরেই আঁকড়ে আছে।
৩. আসল আওয়ামী লীগের কর্মীরা সবসময় দুঃসময়কে স্মরণ করেন। ৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর ২০০৭ সালের ওয়ান ইলেভেনের সময় আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের ভূমিকাকে স্মরণ করে। নকল আওয়ামী লীগাররা সবসময় উন্নয়নের কথা বলে। আওয়ামী লীগের আমলে কী উন্নয়ন হয়েছে তার ফিরিস্তি দেওয়াই নকল আওয়ামী লীগারদের প্রধান কাজ।
৪. আসল আওয়ামী লীগাররা দুঃসময়ের সতর্কবার্তা দেয়। সবসময় মনে করেন যে, আওয়ামী লীগকে এমনভাবে সংগঠিত করতে হবে যেন আজকে ক্ষমতায় আছে কালকে ক্ষমতায় না থাকলেও যেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তি অটুট থাকে সে বিষয়টি নিয়ে তারা চিন্তা করে। কিন্তু নকল আওয়ামী লীগাররাা শুধু আজকের চিন্তা করে। আজকে কীভাবে তারা আরও বেশি ফুলে ফেঁপে উঠবে সেই চিন্তায় তারা মশগুল থাকে।
৫. আসল আওয়ামী লীগাররা সবসময় দলের জন্য ত্যাগ করতে চায়, তারা কোন কিছু চাওয়া পাওয়ার চিন্তা করে না। সত্যিকার আওয়ামী লীগের লোকেরা কিছু না পেলেও দলের আদর্শ ত্যাগ করে না। দলের বিরু’দ্ধাচারণ করে না। নকল আওয়ামী লীগাররা সবসময় কিছু পেতে চায়। কিছু না পেলে তখনই তারা আওয়ামী লীগের সমলোচনায় মুখর হয়ে যায়। আওয়ামী লীগের ভুলের ফিরিস্তির ডালা সাজিয়ে বসে।
৬. আসল আওয়ামী লীগের লোকেরা প্রকাশ্যে কখনও আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে না। প্রকাশ্য আলোচনায় তারা আওয়ামী লীগকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে তবে দলের নীতি নির্ধারণী সভা বা ফোরামে তারা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে। নকল আওয়ামী লীগাররা সুবিধা প্রাপ্তি থেকে ব’ঞ্চিত হলে সমালোচনায় মেতে ওঠে। তখন তারা যেভাবে সমালোচনা করে তখন তা বিরো’ধী দলকেও হার মানিয়ে দেয়।
৭. আসল আওয়ামী লীগের লোকেরা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে সুস্থ এবং সুন্দর দেখতে চায়। তারা শেখ হাসিনার ওপরই সম্পূর্ণরূপে আস্থাশীল। তারা আওয়ামী লীগ মানেই বুঝে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শেখ হাসিনা। অন্য কোনো দল বা উপদল বা বি’ভক্তি তারা পছন্দ করে না, প্রশ্রয় দেয় না। কিন্তু নকল আওয়ামী লীগাররা ক্ষমতাবান হয়েই নিজস্ব একটা বলয় তৈরি করে, নিজস্ব একটা আওয়ামী লীগ তৈরি করে। তার পক্ষের লোকজনকে তারা সবসময় পুরস্কৃত করে এবং বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাকে কেবল তারা মুখেই উচ্চারণ করে।
৮. আসল আওয়ামী লীগের লোকেরা মনে করে আওয়ামী লীগকে সবসময় দায়িত্বশীল থাকতে হবে, জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হবে। এজন্য তারা কোনো জনবিরো’ধী কর্মকান্ড হলে সাথে সাথে উ’দ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। যে কোনো সরকারবিরো’ধী কর্মকান্ডই তাদেরকে চিন্তায় ফেলে। নকল আওয়ামী লীগাররা এসব বিষয় নিয়ে মোটেও চিন্তিত নয়। তারা সবসময় চিন্তা করে যেকোনো প্রকারে ক্ষমতায় থাকতে হবে এবং ভোটে জিততে হবে। জনগণ সেখানে কী ভূমিকা পালন করলো, জনগণ ভোট দিলো কিনা সে বিষয়টি তাদের কাছে তুচ্ছ থাকে।
৯. আসল আওয়ামী লীগের লোকজন সবসময় চিন্তা করে, আওয়ামী লীগ যদি ভুল করে তাহলে সেই ভুলের মা’শুল দিতে হবে গোটা জাতিকে এবং সেজন্য তারা আওয়ামী লীগ যেন ভুল না করে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকে, সজাগ থাকে। দলীয় কো’ন্দল বা দলের অন্তর্কো’ন্দলকে তারা প্রশ্রয় দেয় না। নিজেরা ত্যাগ স্বীকার করে হলেও দলকে কো’ন্দলের হাত থেকে রক্ষা করতে চায়। নকল আওয়ামী লীগাররা সবসময় চিন্তা করে দলের মধ্যে কো’ন্দল বা বি’ভক্তি যত থাকবে তত তাদের লাভ। তারা বি’ভক্তি সৃষ্টি করেই ক্ষমতাবান হতে চায়।
১০. আসল আওয়ামী লীগাররা মনে করে আওয়ামী লীগ চিরকাল ক্ষমতায় থাকবে না, একদিন না একদিন ক্ষমতা থেকে যেতেই হবে। ক্ষমতায় যখন থাকবে না তখনও যেন আওয়ামী লীগ জনগণের আস্থা এবং ভালোবাসায় ধন্য থাকে সেই চিন্তাই তাদের সবসময় আপ্লুত রাখে। কিন্তু নকল আওয়ামী লীগাররা মনে করে, ক্ষমতা চিরস্থায়ী। কোনোদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে চলে যাবে না। সেজন্যই তারা ক্ষমতায় থাকলে সবকিছুকেই তুচ্ছতা’চ্ছিল্য করে। ক্ষমতা চিরস্থায়ী মনে হওয়ার কারণে চিরকাল যেন ক্ষমতায় থাকতে পারে সেই চেষ্টা অ-হর্নিশ তাদের তাড়িত করে।
লেখক: ক্বারী ইকরামুল্লাহ মেহেদী
পরিচিতি: শিক্ষক ও গণমাধ্যম কর্মী
পেকুয়া, কক্সবাজার
পাঠকের মতামত