ছোটবেলায় ঘুরাঘুরি বলতে ছিল আত্মীয় বাড়ি পর্যন্তই। বড় হতে হতে একদিন জানা গেল এমন একজনের কথা যিনি কিনা ভ্রমণ করেছেন বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার প্রতিটি। সাথে সাথে যেন সেটা স্বপ্নের মতো গেঁথে গেল মনে। ভ্রমণ করতে হবে সারা দেশ। তবে জুবায়েরের কাছে সারা দেশ ভ্রমণ বলতে শুধু দেশের জনপ্রিয় পর্যটন স্থলগুলোতে যাওয়া আর চেক ইন দেওয়াই নয়। তিনি জায়গাটিতে যাওয়ার আগে পড়াশোনা করেন সে সম্পর্কে, খুঁজে দেখেন সেখানকার ইতিহাস। অতীতের দলিল হাতে নিয়ে উপস্থিত হন মাটির কাছে, মাটিতে হয়ত সেই চিহ্ন নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থাপনার শেষ টুকরোটি দেখেও যেন শান্তি। কোথাও যেয়ে তার মনে হয় না, এখানে দেখার কিছু নেই বরং সবকিছুর মাঝেই আলাদা সৌন্দর্য খুঁজে পান তিনি। এই ট্রাভেলারের সাথে এক বিকেলে কথা হয় প্রিয়.কম ট্রাভেলের।
জানতে পারি তার ভ্রমণের নানান গল্প। তিনি রেকিট বেনকিজার বাংলাদেশ লিমিটেড এ সেলস অডিট এক্সিকিউটিভ দায়িত্বে আছেন। ফেসবুকে চাকরির বিজ্ঞাপনে ৫০ ভাগ সময় অফিসের বাইরে থাকতে হবে এই শর্ত দেখেই যোগাযোগ করেছিলেন তিনি। কারণ সেই ৬৪ জেলা ঘুরে বেড়ানোর স্বপ্ন। ইন্টার্ভিউ এ জানালেনও সে কথা। প্রশ্ন আসলো, ‘আপনি তো তাহলে কাজ করবেন না, শুধু ঘুরে বেড়াবেন’। উত্তরে জুবায়ের বললেন, ‘রথ আমি দেখে নেব, আপনার কলা বেচা হলেই তো হল!’ চাকরি পেয়ে গেলেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে চলতে থাকলো তার ভ্রমণ। ২০১৪ সালে ৬৪ জেলা ভ্রমণের স্বপ্ন পূরণ করেন জুবায়ের। প্রিয়.কম থেকে জানতে চাই ভ্রমণের খরচ কমাতে হলে কি করা যায় সে ব্যাপারে কিছু পরামর্শ। প্রতিটি জেলার যথাসম্ভব গহীন থেকে ঘুরে আসা মানুষটি বললেন-
“খরচ কমাতে হলে ৩টা কাজ বাদ দিতে হবে আমাদের। কীভাবে যাব, কোথায় থাকব, কী খাব! এই ৩ চিন্তা বাদ দিলে দেখবেন খরচ কমে গেছে!”
কোথায় থাকব-
আমরা কম খরচে বেড়াতে চাই, কিন্তু বিলাসিতা ছাড়তে পারি না। এমনও পর্যটক পেয়েছি যারা বগা লেক যাবেন কিন্তু খোঁজ নিচ্ছেন ওখানে এসি রুম আছে কিনা! কোথাও বেড়াতে গেলে সেখানকার মানুষের সাথে মিশলে ভ্রমণের স্বাদটা পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা ধরেই নিই নিজে যাচ্ছি বা পরিবার নিয়ে ভ্রমণে যাচ্ছি শুধু জায়গাটা দেখার জন্য আর নিজেদের মধ্যে থাকার জন্য। এভাবে খরচ তো কমবেই না, দেখাও সম্পূর্ণ হবে না।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো জায়গা ভ্রমণের ক্ষেত্রে আমাদের প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় এই থাকার জায়গার চিন্তা। আমরা বলি, ওখানে তো কোনো রিসোর্ট নেই, ভালো হোটেল নেই। এটা সত্যি, অনেক জায়গাতেই ভালো মানসম্পন্ন হোটেল নেই। কিন্তু খরচ কমাতে হলে আপনাকে এই চিন্তা ছাড়তে হবে। আপনি যদি ঠিক থাকেন তাহলে আপনার সাথে কেউ ঝামেলা করবে না।“
অনেকেই বেড়াতে যেয়ে স্পটের চেক ইন দেন না। তারা দেন রিসোর্টের চেক ইন। একটা জায়গায় গিয়ে সেখানকার ঐতিহাসিক জায়গাগুলো না দেখে খ্যাতিসম্পন্ন রিসোর্টে যেয়ে সময় দিতে পছন্দ করেন তারা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের চাইতে তারা মুগ্ধ হন কৃত্রিম ঘাসের টিলা দেখে। রিসোর্ট কৃত্রিমভাবে এক জায়গায় সাজানো এত সৌন্দর্য দিচ্ছে আর রিসোর্টে চেকিং দিলে একটা আভিজাত্যের ভাব নেওয়া যায় ফলে প্রকৃতিকে এড়িয়ে আমরা রিসোর্ট খুঁজতে থাকি। এভাবেও খরচ বাড়ে!
কীভাবে যাব-
একটা জায়গায় যাব মানে যেভাবেই হোক সেখানে পৌঁছব। প্রতিটি জায়গায় যাওয়ার একটা লোকাল ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থা আছে। সেটা না করে আমরা শুরুতেই রিজার্ভ খুঁজি। ৪ জন মানুষ হলেই কিন্তু একটা অটো ভরে যায়। শুরুতেই পুরো অটো আমরাই নেব এই কথা না বলে লোকাল ভাড়া জেনে উঠে পড়ুন। জায়গা থাকলে লোকাল মানুষ সাথে নিন। ব্যাস খরচ কমে আসবে।
কী খাব-
ঘুরতে গেলেই যেন চিন্তা থাকে ভালো খাব, মজার খাব। কিন্তু ভালো খাওয়া বলে আসলে কি? রুটি কলা খেয়েও কিন্তু দিন চলে যায়। যার মাথায় ভ্রমণের নেশা থাকে সে দেখা যায় ভুলেই যায় খাওয়ার কথা। মূল কথা হলো, কিছু পাওয়ার জন্য কিছু ছাড় দিতে হয়। বাজেট ট্রাভেল করতে চাইলে দামী খাবার, দামী থাকা, পরিবহন এসব ছাড়তে হবে।
এইসব কথার ফাঁকে জুবায়ের বার বার জোর দেন প্রকৃতির কাছে যাওয়ার ব্যাপারে, ইতিহাসের কাছে যাওয়ার ব্যাপারে। শুধু জনপ্রিয় বলেই কোনো জায়গায় যাওয়া নয়, বরং যেতে হবে জায়গাটিকে জানতে। আগে থেকে পড়াশোনা করে গেলে, একটু খোঁজখবর নিয়ে গেলে ঘুরতেও ভালো লাগবে। এমন অনেক কিছুই হয়ত চোখে পড়বে যা দেখেনি আর কেউ। এমন ভ্রমণের আনন্দই আলাদা।
পাঠকের মতামত