দিল্লির নিজামুদ্দিনের বহুল আলোচিত-সমালোচিত মুরুব্বি মাওলানা মুহাম্মদ সা’দ কান্ধলভির বাংলাদেশে আগমন উপলক্ষে বুধবার সারাদিন উত্তাল ছিল রাজধানীর রাজপথ। শেষ পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাকে রাজধানীর কাকরাইল মসজিদে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু অনেকের মনেই প্রশ্ন মাওলানা সাদকে নিয়ে কেন এতো বিতর্ক?
তাবলিগ জামাতের বিশ্ব মারকায বা কেন্দ্রস্থল হলো দিল্লির নিজামুদ্দিন মসজিদ। এখানকার আমির বা প্রধানই হন বিশ্ব-তাবলিগের আমির। বর্তমানে এই গুরুদায়িত্ব পালন করছেন দিল্লির মাওলানা সা’দ কান্ধলভী। সেই হিসাবে ইজতেমাতেও প্রধান মুরুব্বি হিসেবে থাকার কথা মাওলানা সা’দের। কিন্তু উপমহাদেশের ইসলামি শিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম দেওবন্দ সম্প্রতি সা’দের কিছু বক্তব্যে নাখোশ হয়। পরে সেই বিতর্কই ছড়িয়ে পড়ে বিশ্ব তাবলিগে।
মাওলানা সা’দের ‘ইসলাম শিখিয়ে অর্থ নেয়া নাজায়েজ’ এবং ‘নিজামুদ্দিন মারকাযকে মক্কা-মদিনার পর ইসলামের সবচেয়ে বড় কর্তৃপক্ষ’ দাবি করে দেয়া মন্তব্যই সবচাইতে বেশি সমালোচিত। ভারতীয় গণমাধ্যমেও তার বক্তব্যগুলো নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়।
সা’দের বিপক্ষে যৌথ বিবৃতি দেন দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম বা প্রধান মাওলানা আবুল কাসেম নোমানি, নদওয়াতুল উলামা’র প্রিন্সিপাল মাওলানা সাইয়্যিদ সালমান আহমদ নদভী ও দিল্লির আইম্মা পরিষদের চেয়ারম্যান মুফতি ওয়াজাহাত কাসেমি। পরে ‘তাবলিগ জামাতের আমির মৌলবি সা’দের ‘কুফরি কালিমা’ শিরোনামে ভারতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
বিবৃতিতে প্রখ্যাত আলেমরা বলেন, ‘মারকায আমির মওলানা সা’দ কান্ধলভীকে লিখিত দিয়ে তার বক্তব্য থেকে সরে আসতে হবে। নিজের অবস্থান থেকে যদি তিনি ফিরে না আসেন তবে আকাবিরে উলামারা কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে।’ এমন চিঠি নিজামুদ্দিনেও পাঠানো হয়।
পরে এই চিঠির জবাব দিয়েছেন মওলানা সা’দ। দেওবন্দ মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আবুল কাসেম নোমানিকে পাঠানো চিঠিতে তিনি জানান, আপনাদের লিখিত চিঠি হাতে পেয়েছি। যেখানে অধমের বিভিন্ন বয়ানে উল্লেখিত কিছু আফকার (চিন্তা) ও দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে আপনাদের কাছে অভিযোগ এসেছে জানিয়েছেন। যেমন, কুরআন- হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা, মনগড়া তাফসির, আম্বিয়ায়ে কেরামের শানে বেয়াদবি, সর্বসম্মত ফতোয়ার বিপরীতে ব্যক্তিগত রায় বা জুমহুরে উম্মতের মতের বিপরীতে বিশেষ মত গ্রহণ ইত্যাদি।
মাওলানা সা’দ আরো বলেন, ‘প্রথমত আমি অধম স্পষ্ট ভাষায় নিজের অবস্থান পরিষ্কার করা জরুরি মনে করি। আমি আলহামদুলিল্লাহ আমাদের সমস্ত আকাবির উলামায়ে দেওবন্দ ও সাহারানপুর এবং তাবলিগ জামায়াতের আকাবির মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসুফ ও মাওলানা মুহাম্মাদ ইনআমুল হাসান রহঃ এর মাসলাক ও আদর্শের উপর কায়েম আছি এবং সামান্য পরিমাণ বিচ্যুতিও পছন্দ করি না।’
আল্লাহর কাছে মাওলানা সাদ ক্ষমা চেয়ে মাওলানা সাদ বলেন, ‘লিখিত পত্রে আপনারা যেসব পুরাতন বয়ানের কথা উল্লেখ করেছেন, আমি অধম দ্বীনী দায়িত্ব মনে করে সেগুলো থেকে পরিষ্কার শব্দে ‘রুজু” (কথা উঠিয়ে নিচ্ছি) এবং মহান আল্লাহর কাছে আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’
প্রসঙ্গত, ২০১৫, ১৬ ও ১৭ সালে বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মুনাজাত করান মাওলানা সা’দ। চলতি বছরও বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন তিনি। তবে দেওবন্দ এবং নিজামুদ্দিনের মধ্যে বিরাজমান উত্তেজনা চলে এসেছে বাংলাদেশের আলেমদের মধ্যেও। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মাদ্রাসাই হচ্ছে দেওবন্দ আদর্শের।
পাঠকের মতামত