আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেছেন, কেয়ামত তার নির্ধারিত সময় থেকে এক মুহূর্হ আগেও হবে না,পরেও হবে না। আমাদের গোটা গ্যালাক্সি ইসরাফিল আলাইহিস সালামের সিঙ্গার মধ্যে।আল্লাহ তাকে ফুৎকারের নির্দেশ দিলে তা দীর্ঘায়িত হবে ৪০ দিন।অতি নিচু ভলিউম থেকে ধীরে তা বাড়তে থাকবে।
প্রথমদিন যুক্তিবাদী বিধর্মীরা এই শব্দের উৎস কি মাটির নিচ থেকে আসছে না আকাশ থেকে আসছে এ নিয়েই গবেষণা আর বিশ্লেষণ করে কাটাবে।আর শব্দের চূড়ান্ত পর্যায়ের কথা আল্লাহ বলেছেন,পাহাড়সমূহ তুলার মতো আকাশে ভেসে বেড়াবে।তবে এ দৃশ্য দেখার জন্য কোনো মানুষ তখন বেঁচে থাকবে না।
কাছের সৌরজগতের গ্রহসমূহ,আর দূরের অ্যান্ডেমিন্ডা নক্ষত্রপুঞ্জের সব গ্রহ-নক্ষত্র তাদের নিজস্ব কক্ষপথে ঘূর্ণি ও প্রদক্ষিণের লাখো কোটি বছরের স্বভাব পাল্টে পতিত হতে থাকবে। তীব্র গতির পতনের সঙ্গে সঙ্গে গ্রহ ও নক্ষত্রের মাঝে হবে ভয়াবহ সংঘর্ষ।এ ভয়াল দৃশ্য কল্পনা করাও এখন কারো পক্ষে সম্ভব না।
তবে এ সব ঘটার অনেক আগে পৃথিবীবাসী সম্মুক্ষীণ হবে বড় ধরনের কিছু ফেতনার।
এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মহা শক্তিধর সাংঘাতিক রকম ক্ষমতার অধিকারী দাজ্জালের আবির্ভাব।সম্প্রতি দাজ্জালকে নিয়ে অনেকে গবেষণাধর্মী বিভিন্ন বই লিখেছেন। নবীয়ে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গবেষণায় ভুল হলে এক নেকি আর সঠিক হলে ডাবল নেকি। কয়েকটি বইয়ে ব্যক্তি দাজ্জাল বা মানুষ দাজ্জালের আবির্ভাবের সব সম্ভাবনা নাকচ করা হয়েছে। দাজ্জালের হাদিসসমূহকে রূপক অর্থে ব্যাখ্যা করার কসরত করা হয়েছে। অনেকে দাবি করেন,গণতন্ত্রের উত্থান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মানুষের অকল্পনীয় গতিতে এগিয়ে চলা,কৃত্রিম স্যাটেলাইট ইত্যাদিই নাকি দাজ্জাল।
হাদিসে পরিষ্কার বলা হয়েছে,ইহুদি এক দম্পতির ১৭ মতান্তরে ২৩ বছর দাম্পত্যজীবনের পর দাজ্জালের জন্ম হবে। বলাবাহুল্য, পিতা-মাতার অত্যন্ত যত্নে সে লালিত-পালিত হবে।
শুধু মুসলমান না,এ পৃথিবীর অন্য সব ধর্মের মানুষও বিশ্বাস করে, আল্লাহ জীবন দেন। আল্লাহই মৃত্যু দেন। কিন্তু আল্লাহ মজবুত আর দুর্বল ঈমানদারের মধ্যে পার্থক্য করার উদ্দেশ্যে সাময়িক সময়ের জন্য তার এ ক্ষমতা দাজ্জালের হাতে তুলে দেবেন।সে এই শক্তি সুচারুরূপে ব্যবহার করে ঈমানদার মানুষের মনেও দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করবে।
নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দেখ,দাজ্জাল যত ভেল্কিবাজি দেখাক না,সে হচ্ছে কানা। অর্থাৎ ত্রুটিযুক্ত।আর তোমাদের আল্লাহ ত্রুটিমুক্ত। তার একটা চোখ আঙ্গুরের মতো ফুলে থাকবে।আর তার কপালে লেখা থাকবে কাফের।পৃথিবীতে যত বড় ফেতনার ঘটনা ঘটুক না কেন,তা হচ্ছে কেবল জীবিত লোকের জন্য।কিন্তু দাজ্জালের ফেতনায় মৃত লোকরাও অন্তর্ভুক্ত হবে।তাই তোমরা আল্লাহর কাছে দাজ্জালের ফেতনা থেকে পানাহ চাও।
এ পৃথিবীতে এমন কিছু অতি বিখ্যাত মানুষ এসেছেন, যাদের মৃত্যু বহু বছর আগে হয়ে গেলেও এখনও আমরা তাদের চেহারার গড়ন চিনি।যেমন আইনেস্টাইন, নিউটন, জর্জ ওয়াশিংটন, আব্রাহাম লিংকন বা আমাদের বঙ্গবন্ধু। জীবদ্দশায় এরা যদি আল্লাহর কাছে দাজ্জালের ফেতনা থেকে বিশেষভাবে পানাহ না চায়,তা হলে দাজ্জালের হাতের ইশারায় এরা কবরের মাটি ঠেলে উঠে দাঁড়াবে।হাজার হাজার দর্শকের সামনে দাজ্জালকে রব বা প্রভু ঘোষণা দিয়ে আবার মাটির নিচে চলে যাবে। রেওয়ায়েতে কিছু মতো পার্থক্য রয়েছে।
অনেকে বলেছেন,স্বয়ং ইবলিস তাদের জীবদ্দশার মুখবয়ব নিয়ে কবর ভেঙে উঠে দাঁড়াবে।ঘটনা যেভাবেই ঘটুক, ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে যে তা নিশ্চিত।ঈমানে ঘুণপোকা আক্রান্ত হবে যে তাও অবধারিত।অতিমাত্রার মেধাবী ও বুদ্ধিমান দাজ্জাল ভীষণ দ্রুতগামী একটা বাহনে চড়ে মানুষের ঈমান নষ্টের মিশন নিয়ে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত চষে বেড়াবে।তার পেছনে চলবে স্বর্ণ,রুপার মতো মূল্যবান সব খনিজ সম্পদ। মানুষের ঈমান নষ্ট করার সফলতায় সে যেভাবে আনন্দিত হবে,তেমনি তার মধ্যে কাজ করবে মৃত্যু ভয়। মহান আল্লাহ থেকে ঈমান হারিয়ে যারা তার ওপর ঈমান আনবে,তাদের সে অকাতরে ধন-সম্পদ দান করে যাবে।আবার আত্মরক্ষার্থে প্রতি মুহূর্তে স্থান পরিবর্তন করতে থাকবে।পালাতে থাকবে।
দাজ্জাল জানে,সাধারণ কোনো মুসলমান তাকে হত্যা করতে সক্ষম হবে না।তার মৃত্যু যার হাতে লেখা তার গুণবাচক নাম এবং দাজ্জালের গুণবাচক নাম এক। সেটি হচ্ছে ‘মাসিহ’।অর্থ অধিক ভ্রমণকারী।অবশেষে সিরিয়ার লুদ নামের গেটে হজরত ঈসা (আ .) দাজ্জালকে নাগালে পাবেন এবং হত্যা করবেন।
স্যাটেলাইটের ক্যামেরা জুম করে বিজ্ঞানী ও গবেষকরা পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের প্রতিটা জায়গা তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে। কোথাও বিশাল সংখ্যক ইয়াজুজ-মাজুজের দেখা পাওয়া যায়নি।
এর অর্থ পৃথিবীর কোথাও তাদের টিকে থাকার সম্ভাবনা নেই তা না। আমার ছাত্রজীবনে একটা ভয়াল পতঙ্গ ঝড় খুব কাছে থেকে দেখার সৌভাগ্য হেয়েছে। সন্ধ্যার অল্প পরই যাত্রাবাড়ি থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত সুদীর্ঘ এ মহাসড়কে হঠাৎ করে কোথা থেকে যেন এসে গাড়ির হেডলাইটের ওপর আছড়ে পড়ে অসংখ্য-অগণিত পতঙ্গ।
গাড়ির সংখ্যা হাজার হাজার হলেও এদের সংখ্যা এতটাই বেশি যে বাধ্য হয়ে সব গাড়ি গতি কমাতে বাধ্য হয়।সৃষ্টি হয় দীর্ঘ জ্যামের।পরের দিন সকালে মহাসড়কের অবস্থা পরিদর্শন করতে যাই।গরুর ভূঁড়ি কাটলে অর্ধেক হজম হওয়া হলদে সবুজাভ ঘাসের মতো গাড়ির চাকায় পিষ্ট হওয়া পতঙ্গ ভর্তা। চোখ যতদূর যায়।আধিক্যের কারণে যাকে উল্লেখ করা হয়েছে পতঙ্গ-ঝড় বলে।এই পতঙ্গরা কোথা থেকে এসেছে? সঠিক উত্তর কারো জানা নেই।
ইয়াজুজ-মাজুজ আছে এবং নির্ধারিত সময়ে সারা পৃথিবী জুড়ে এদের বিস্তার ঘটবে।এ কথা যুক্তি-তর্ক ছাড়াই আমাদের বিশ্বাস করে নিতে হবে। ইয়াজুজ-মাজুজের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য যিনি দেয়াল নির্মাণ করেন তিনি ইস্কান্দার,আবার তিনিই আলেকজান্ডার।এমন মতামতও পাওয়া যায়।আবার সেই দেয়ালকে অনেকে চীনের গ্রেটওয়াল হিসেবেও চিহ্নিত করেন।যদিও চীনের মহাপ্রাচীর গড়ে উঠেছে ৪/৫শ বছর ধরে ৭/৮ জন সম্রাটের আমলে।
এমনও হতে পারে, হিমালয় পর্বতাঞ্চলের তলদেশে বিশাল এলাকাজুড়ে প্রতিমুহূর্তে সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে যাচ্ছে ইয়াজুজ-মাজুজ।যদিও তাদের মানবজাতির একটা অংশ বলা হয়েছে। নূহ (আ.)-এর পুত্র ইয়াফেস থেকে তারা বংশবিস্তার করেছে। কিন্তু তাদের স্বভাব-চরিত্রের মধ্যে মানবিক বৈশিষ্ট্য খুব কম পরিমাণেরই উপস্থিতি পাওয়া যায়।
মানুষ গ্রহণ করে অক্সিজেন,ত্যাগ করে কার্বনড্রাই অক্সাইড।এই সূত্র ইয়াজুজ-মাজুজের ক্ষেত্রে সঠিক নাও হতে পারে।অমানবিক ও মেধাহীন বলার কারণ হচ্ছে, তারা হবে সাংঘাতিক রকমের হিংস্র ও মৃত্যু ভয়হীন।যত অত্যাধুনিক অস্ত্র আর যত হাজার গুলি থাক না কেন তাদের ভয় পাবে না এমন কোনো মানুষ নেই। ব্রাশফায়ার করে লাশের স্তূপ বানিয়ে ফেলা হবে। কিন্তু সেই স্তূপ ডিঙ্গিয়ে পিল পিল করে তারা নামতে থাকবে। সামনে লতা, পাতা, ফল, মানুষ,পানি যা পাবে সব খেয়ে সাবাড় করে ফেলবে।মানুষ তার অস্ত্র ফেলে দৌড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাবে। এমনকি হজরত ঈসা (আ.)ও ইমাম মাহদি তাদের দল নিয়ে পাহাড়ের মাথায় আশ্রয় নেবেন।প্রচণ্ড ক্ষুধা কষ্ট ভোগ করবেন।
পৃথিবীর আলো-বাতাস পেয়ে ইয়াজুজ-মাজুজ আঞ্চলিক শব্দে যাকে বলে উজাইয়া উঠবে।আবার এই আলো বাতাসের কারণেই খুব অল্প সময়ের মধ্যে মহামড়ক লেগে সব নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।পৃথিবীর রাস্তা,ঘাট,মাঠ সব জায়গায় এদের মৃতদেহ এমনভাবে পড়ে থাকবে যে মানুষের পা ফেলার মতো স্থানও খালি পাওয়া যাবে না।
মহাবিপাকে পড়ে হজরত ঈসা (অ.) আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন। ফলে উটের মতো মোটা গলার সেই ডাইনোসর যুগের হাজার হাজার বিশাল পাখি আল্লাহ তায়ালা পাঠাবেন।তারা ইয়াজুজ-মাজুজের লাশ কামড়ে ধরে গভীর সমুদ্রে নিয়ে ফেলবে।
তাদের দায়িত্ব শেষ হলে আবার তারা হারিয়ে যাবে। যেভাবে এখন তারা হারিয়ে আছে।বরকতময় সেই পৃথিবীতে তখন কেবল একটাই ধর্ম হবে ইসলাম।
লেখক :আবদুল্লাহ মির্জা, গদ্যকার ও শিক্ষক
পাঠকের মতামত