প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ভুটান ভ্রমণে এতদিন খুব একটা খরচ লাগতো না বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশের জন্য।
এসব দেশের পর্যটকদের জন্য একপ্রকার উন্মুক্তই ছিল ভুটানের দরজা। লাগতো না কোনো ভিসা ফি, কোনোমতে দেশটিতে পৌঁছালেই পাওয়া যেতো অন-অ্যারাইভাল ভিসা, যতদিন খুশি থাকা যেতো, এর জন্য অতিরিক্ত কোনো টাকা-পয়সা দেওয়া লাগতো না।
তবে, শেষ হতে যাচ্ছে সেই সুখ! বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপের পর্যটকদের ওপরও বিভিন্ন ধরনের বিধি-নিষেধ ও ফি বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভুটান সরকার।
এ বিষয়ে প্রস্তাবনার একটি খসড়া চূড়ান্ত করেছে ট্যুরিজম কাউন্সিল অব ভুটান (টিসিবি)। আগামী মাসেই সেটি দেশটির পার্লামেন্টে তোলার কথা রয়েছে।
সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু’র এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
২০১৮ সালে মোট ২ লাখ ৭৪ হাজার পর্যটক ভুটান ভ্রমণ করেছেন। এর মধ্যে দুই লাখই এ উপমহাদেশের, যার মধ্যে আবার ১ লাখ ৮০ হাজার ছিল সীমান্তঘেঁষা দেশ ভারত থেকে।
জানা যায়, ভুটান ভ্রমণের জন্য অন্য দেশের পর্যটকদের প্রতিদিন ২৫০ মার্কিন ডলার (২১ হাজার ২৫০ টাকা প্রায়) পরিশোধ করতে হয়, যার মধ্যে ৬৫ ডলার টেকসই উন্নয়ন ফি ও ৪০ ডলার ভিসা ফি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে, বাংলাদেশ, ভারত ও মালদ্বীপের নাগরিকদের জন্য এতদিন এর কোনোটাই দিতে হতো না।
নতুন নিয়ম চালু হলে ভুটান যেতে অন্য দেশগুলোর মতোই উপমহাদেশের এই তিন দেশের পর্যটকদেরও ভিসা ফি’সহ আগেই আবেদন করতে হবে। পাশাপাশি, উন্নয়ন ফি’র জন্য প্রতিদিন গুনতে হবে ৬৫ ডলার বা ৫ হাজার ৬০০ টাকার মতো।
অর্থাৎ, কেউ একদিনের জন্য ভুটান গেলেও তাকে ভিসা ফি’র ৩ হাজার ৪০০ টাকা (৪০ ডলার) ও উন্নয়ন ফি’র ৫ হাজার ৬০০ টাকাসহ অন্তত নয় হাজার টাকা অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে।
প্রস্তাবনাটি ডিসেম্বরে পার্লামেন্টে উঠলে আগামী বছরের শুরু থেকেই এ নিয়ম কার্যকর হতে পারে বলে জানা গেছে।
এছাড়া, পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে স্থানীয়দের স্বল্প খরচে বাড়িভাড়ার অনলাইন বিজ্ঞাপনও নিষিদ্ধ করছে ভুটান সরকার। তাদের দাবি, এর কারণে অনিয়ন্ত্রিতভাবে গেস্ট হাউস বা অতিথিশালা তৈরি হচ্ছে। দেশটি জানিয়েছে, এখন থেকে শুধু টিসিবি অনুমোদিত বাড়িভাড়ার বিজ্ঞাপনই অনলাইনে প্রকাশ করা যাবে।
এমন সিদ্ধান্তে দেশটিতে যেতে অনেক পর্যটকের আগ্রহেই ভাটা পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও, ভুটানের ইচ্ছা অনেকটা সেরকমই।
গত কয়েক বছরে এ অঞ্চলের ভুটান ভ্রমণকারীর সংখ্যা অনেক বেশি বেড়ে গেছে। এত বেশি পর্যটকদের পর্যাপ্ত খাদ্য ও আবাসনের ব্যবস্থা করতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। একারণে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটক সংখ্যা কমিয়ে সেটিকে সহনশীল মাত্রায় আনার উদ্যোগ নিচ্ছে ভুটান।
পাঠকের মতামত